ঢাকার কেরানীগঞ্জের ইস্পাহানি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ৫ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন স্কুল পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা জেলা যুবলীগের সভাপতি শফিউল আজম বারকু। তিনি পালানোর পর স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি হন মৎস্যজীবী দলের নেতা জাহাঙ্গীর আলম ইব্রাহিম। দায়িত্ব পেয়েই তিনি প্রতিষ্ঠানটি লুটেপুটে খাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টির তদন্তও শুরু করেছে প্রশাসন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেরানীগঞ্জের রামেরকান্দায় অবস্থিত ইস্পাহানি উচ্চ বিদ্যালয়টি ৬০ বছরের পুরোনো। গত ১৫ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আওয়ামী লীগের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ভর্তি ফি, পরীক্ষার ফি, স্কুলের ভবন নির্মাণ, বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমিতে মার্কেট নির্মাণ ও দোকান বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন শফিউল।
বিদ্যালয়-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগের পতনের পর পালিয়ে যান শফিউল। এরপর গত ৯ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আদেশে স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় কেরানীগঞ্জ মডেল থানার মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীরকে। দায়িত্ব পাওয়ার পরই তিনি বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎ করা শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমিতে নির্মাণাধীন মার্কেটের দোকান বেশি দামে বিক্রি করে কম দাম দেখানো, দোকান ভাড়া আদায়ের পর বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে জমা না দেওয়া এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জমি ব্যবসায় বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের অর্থ তসরুপের অভিযোগ। এলাকাবাসীর পক্ষে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে দুদক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্যজীবী দলের নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে সাবেক সভাপতি স্কুলের জমির ওপর নির্মিত ভবনের নিচতলায় ৭৫টি, দোতলায় ১২টি দোকান বিক্রি করেছেন। কিন্তু দোকান বিক্রির টাকা স্কুলের নামে থাকা অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। দোকানের পজিশন বিক্রি ও অগ্রিম বাবদ সালামি নেওয়া প্রায় তিন থেকে পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এই অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম জড়িত ছিলেন। তিনিও পালিয়ে গেছেন।
এদিকে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া অভিযোগ সম্পর্কে এই মৎস্যজীবী দলের নেতা বলেন, একটি কুচক্রী মহল স্কুল কমিটির সভাপতি হতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে নামে-বেনামে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত জবাব এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিয়েছি।
অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান জানান, বিগত দিনের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য খুঁজে বের করতে ইসলাম জাহিদ অ্যান্ড কোং নামের একটি অডিট ফার্ম অডিট করছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিনাত ফৌজিয়া বলেন, ওই স্কুলের পরিচালনা পরিষদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা কারিশমা আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে বর্তমান পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা দোষী সাব্যস্ত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেন মোল্লা জানান, ইস্পাহানি উচ্চ বিদ্যালয়ে অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি আমি অবগত। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
তদন্ত প্রসঙ্গে কেরানীগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা কারিশমা আহমেদ বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কথা বলা যাবে না।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম ইস্পাহানি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের বিরুদ্ধে বেনামে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।